০৯:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব

  • প্রতিনিধি
  • আপডেট সময়: ০২:২৮:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • 17

>মুহাম্মদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার:: বান্দরবানে শুরু হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব। উৎসবকে ঘিরে পার্বত্য জেলার পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা, বিভিন্ন পাড়া ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর বিভিন্ন আনন্দ আয়োজন। পুরাতন বাংলা বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রতিবছরই পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত মারমা সম্প্রদায়ের জনসাধারণ উদযাপন করে সাংগ্রাই উৎসব। প্রতিবছরের ১৩এপ্রিল থেকে বিভিন্ন অনুষ্টানমালার আয়োজন করে কয়েকদিন ব্যাপী পার্বত্য জেলা বান্দরবানে চলে এই উৎসবের আমেজ।

এদিকে প্রতিবছরের মত মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে বান্দরবান উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি বান্দরবানের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়।

এসময় নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণী ও শিশুরা বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। র‍্যালীতে অংশ নেয় মারমা, চাকমা, পা, ত্রিপুরাসহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষসহ বাঙ্গালী জনসাধারণ। এদিকে পুরাতন বাংলা বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ

জানাতে এই আয়োজনে সামিল হতে পেরে খুশি সকলে।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, আর উদ্বোধন শেষে তিনি নতুন বছর সকলের জন্য মঙ্গল নিয়ে আসুক এমন প্রত্যাশা কামনা করেন। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.আবু তালেব, পাবত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএস মং মারমা, উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং মারমা, সহ-সভাপতি থুইসিং প্রু লুবুসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।

শোভাযাত্রা শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর হলরুমে উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজা অনুষ্ঠান। এসময় বিভিন্ন পাড়া ও গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এই উৎসবের আয়োজনে সামিল হয় আর আয়োজকেরা বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজা করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামগ্রী দান করে। বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজা করার মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করতে পেরে খুশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণী।

এদিকে প্রতিবারের মত এবারেও বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই শোভাযাত্রা এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজাসহ নানা আয়োজন করতে পারায় খুশি আয়োজকেরা। উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং মারমা বলেন, সাংগ্রাই উৎসব আমাদের মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব আর এই উৎসবের আমেজ শুধু মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে নয় সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পরে। উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং মারমা আরো বলেন, এবারের উৎসব উদযাপন করতে গিয়ে আমরা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিকসহ সবস্থরের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পাচ্ছি আর আশা করছি এবারে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসুচী সমাপ্ত করতে পারবো।

তিনি আরো জানান, নানা আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী চলবে মারমা সম্প্রদায়ের এই সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন, আর ১৪এপিল দুপুরে পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্মান, রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব, ১৫ এপিল বিকেলে মৈত্রি পানি বর্ষন, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্টান ও সবশেষে ১৮এপিল সন্ধ্যায় বিহারে বিহারে সমবেত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বান্দরবানে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্র ঐতিহ্যবাহী এই সাংগ্রাই উৎসবের।

Tag :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

তথ্য সংরক্ষণ করুন

জনপ্রিয়

উখিয়ায় মালিকবিহীন ১লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ!

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব

আপডেট সময়: ০২:২৮:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

>মুহাম্মদ আলী, স্টাফ রিপোর্টার:: বান্দরবানে শুরু হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব। উৎসবকে ঘিরে পার্বত্য জেলার পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা, বিভিন্ন পাড়া ও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর বিভিন্ন আনন্দ আয়োজন। পুরাতন বাংলা বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রতিবছরই পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত মারমা সম্প্রদায়ের জনসাধারণ উদযাপন করে সাংগ্রাই উৎসব। প্রতিবছরের ১৩এপ্রিল থেকে বিভিন্ন অনুষ্টানমালার আয়োজন করে কয়েকদিন ব্যাপী পার্বত্য জেলা বান্দরবানে চলে এই উৎসবের আমেজ।

এদিকে প্রতিবছরের মত মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে বান্দরবান উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বান্দরবান রাজার মাঠ থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি বান্দরবানের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়।

এসময় নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণী ও শিশুরা বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। র‍্যালীতে অংশ নেয় মারমা, চাকমা, পা, ত্রিপুরাসহ ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষসহ বাঙ্গালী জনসাধারণ। এদিকে পুরাতন বাংলা বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে বরণ

জানাতে এই আয়োজনে সামিল হতে পেরে খুশি সকলে।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, আর উদ্বোধন শেষে তিনি নতুন বছর সকলের জন্য মঙ্গল নিয়ে আসুক এমন প্রত্যাশা কামনা করেন। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.আবু তালেব, পাবত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএস মং মারমা, উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং মারমা, সহ-সভাপতি থুইসিং প্রু লুবুসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন।

শোভাযাত্রা শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর হলরুমে উৎসব উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজা অনুষ্ঠান। এসময় বিভিন্ন পাড়া ও গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এই উৎসবের আয়োজনে সামিল হয় আর আয়োজকেরা বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজা করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামগ্রী দান করে। বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজা করার মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করতে পেরে খুশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণী।

এদিকে প্রতিবারের মত এবারেও বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই শোভাযাত্রা এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের পূজাসহ নানা আয়োজন করতে পারায় খুশি আয়োজকেরা। উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং মারমা বলেন, সাংগ্রাই উৎসব আমাদের মারমা সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব আর এই উৎসবের আমেজ শুধু মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে নয় সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পরে। উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং মারমা আরো বলেন, এবারের উৎসব উদযাপন করতে গিয়ে আমরা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিকসহ সবস্থরের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পাচ্ছি আর আশা করছি এবারে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসুচী সমাপ্ত করতে পারবো।

তিনি আরো জানান, নানা আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী চলবে মারমা সম্প্রদায়ের এই সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন, আর ১৪এপিল দুপুরে পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি স্মান, রাতব্যাপী পিঠা তৈরি উৎসব, ১৫ এপিল বিকেলে মৈত্রি পানি বর্ষন, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্টান ও সবশেষে ১৮এপিল সন্ধ্যায় বিহারে বিহারে সমবেত প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বান্দরবানে সমাপ্তি ঘটবে মারমা সম্প্র ঐতিহ্যবাহী এই সাংগ্রাই উৎসবের।