
মোহাম্মদ আবদূর রশিদ, সবেমাত্র পঁচিশে ‘পা’ রাখা একজন ধর্মভীরু যুবক। একজন কোরআনের হাফেজও। বাবা-মা নেই,একজন এতিম সন্তান।
পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বেচে নেন শিক্ষকতা পেশা। সংসার এবং জীবিকার তাগিদে এনজিও পরিচালিত স্কুলে শিক্ষকতা থেকে আসা স্বল্প বেতনের আয়ে কোনো রকমে চলছিল সংসার।স্থানীয়দের কাছে নম্র- ভদ্র হিসেবে বেশ পরিচিত সে।কেনা জানে এই যুবক’কে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাবে!তেমনি ফাঁসিয়েছেও, অভিযোগ তুলেছে খোদ তার এলাকা উখিয়ার বালুখালীর বাসিন্দারা।তাকে রাস্তার উপর থেকে ধরে নিয়েছে কোন কথা ছাড়াই।তাও লোকচক্ষুর সামনে।ওই সময় হাফেজ আবদূর রশিদের নিকট কোন প্রকার বৈধ-অবৈধ কিছুই পায়নি, দাবী করেছেন এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ।
মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে বালুখালী পানবাজারস্থ স্টেশনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে হাফেজ আবদূর রশিদের মুক্তি দাবী করে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানানো হয়।
গত ১৯ মে বিকেলে রশিদকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর রাতে ১০ হাজার পিস ইয়াবা সহ আটক দেখিয়ে উখিয়া থানায় মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আব্দুর রশিদ সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। হাফেজ আবদূর রশিদের স্ত্রী জিসান আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,আটকের দিন বাজারে যাওয়ার পথে অতর্কিতভাবে রশিদকে তুলে নিয়ে যায় ডিএনসি সদস্যরা। জিসান আক্তার দাবী করেন, প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী সালামত উল্লাহ।সালামত উল্লাহ রশিদের ভগ্নপতি হলেও ইয়াবায় সম্পৃক্ত ছিলনা রশিদ। সালামত উল্লাহ’কে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়ে তার নিরাপরাধ স্বামী’কে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।তাকে আটকের পর আমি সহ এলাকার অনেকেই ডিএনসি’র লোকজনের সাথে কথা বলি,তারা আশ্বাস দিয়েছিল,কিছু কথা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরেছি,ছেড়ে দেওয়া হবে।তারা একেক সময় একেক রকম কথা বলে আমাদের সাথে।
এসময় মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বালুখালী জামে মসজিদের খতিব মৌলানা মুবিন উদ্দিন।তিনি বলেন, রশিদ একজন হাফেজ, সে আমার মসজিদের নিয়মিত মুসল্লী এমন ধর্মপ্রাণ যুবকের মাদক কারবারে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসেনা। আমি তার দ্রুত মুক্তি চাই এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।
উখিয়ার আরেক মজলুম সংবাদকর্মী শ.ম.গফুর দু:খভারাক্রান্ত মনে বলেছেন,আমাকেও গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে র্যাব-১৫’র তৎকালীন সিও খায়রুল আলম সরকারের নির্দেশে প্রকাশ্য জনস্মমুখে সাদা পোশাকধারী সোর্স দিয়ে ধরে নিয়ে যায়,পুরোরাত অমানুষিক নির্যাতন করে একদিন একরাত পরে রাতের দেড়টায় ভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে,৩০ হাজার ইয়াবা পেয়েছে মোটর সাইকেলে এমন মিথ্যা এজাহার দেখিয়েছিল।
সরকার পরিবর্তন হয়েছে,প্রশাসনের কতিপয় দুর্লোভী কিছু কর্মকর্তাদের আগের সেই ফাঁসানো এবং সাজানো ঘটনা বিলুপ্ত হলোনা।আগের ধারাবাহিকতায় হাফেজ রশিদ’কেও ফাঁসিয়েছে।উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করে রশিদ’কে জামিনে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের কান্না থামানোর আহবান জানানো হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্তারা এর আগেও নিরাপরাধ মানুষকে ফাঁসিয়েছে উল্লেখ করে সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আবছার সাজু বলেছেন রশিদের এমন দুঃখজনক পরিণতির রহস্য উদঘাটনে সংশ্লিষ্টদের সুষ্ঠু তদন্ত করার অনুরোধ করেন।স্থানীয় যুবদল নেতা নুরুল হাকিম বলেন,রশিদ আমাদের চোখে বেড়ে উঠেছে।তার নৈতিকতা সম্পর্কে আমরা এলাকাবাসী অবগত।তার পরিবারে দুলাভাই সালামত উল্লাহ কিংবা অন্য কেউ মাদকে জড়িত হতে পারে,কিন্তু রশিদ জড়িত নয়।খুবই সাদামাটা জীবন তার।সামান্য বেতনে টেনেটুনে সংসার চলছিল।আল্লাহভীরুতায় কোন অপকর্মে জড়াননি কোন দিন।
সাংবাদিক নেতা আব্দুস সাত্তার আজাদের সঞ্চালনায় এসময় স্থানীয় সাংবাদিক, পেশাজীবী রাজনীতিবিদ সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক মো: সিরাজুল মোস্তফা জানিয়েছেন,১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আবদূর রশিদ’কে গ্রেফতার করা হয়েছে।পালিয়ে যাওয়া আসামী সালামত উল্লাহ আবদূর রশিদের ভগ্নিপতি।তার পরিবারের প্রায় ইয়াবা কারবারে জড়িত।গোপনে টাকায় মুল্যে ইয়াবা বেচাকেনার সময় সে ধরা পড়েছে।
গত ২০ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা মামলায় রশিদকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন বলে জানা গেছে।