০৪:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

উখিয়ায় টানা বৃষ্টি:গ্রামীন সড়ক বিধ্বস্ত:বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ: জনজীবন সংকটের কবলে!

  • প্রতিনিধি
  • আপডেট সময়: ০৩:০২:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • 37

শ.ম.গফুর, উখিয়া:: উখিয়ায় টানা দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্লাবিত হয়েছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বিধ্বস্ত হয়েছে গ্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থা।পানিতে তলিয়ে গেছে ক্ষেতখামার। অনেকে পরিবার পানিন্দি হয়ে পড়েছে।বিদ্যুতের ঘন-ঘন লোডশেডিংয়ে অন্ধকারে তীব্র কষ্টে কাতর মানুষ।

কর্মে যেতে না পেরে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে।দিনমজুর কামলারা বেশী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এছাড়াও রিকসাচালক, সিএনজি ও টমটম চালকরা পড়েছেন বিপাকে।দেখা দিয়েছে অর্থ সংকট।এ ছাড়াও কাচা ব্যবসায়ীরাও তরিতরকারি বিকিকিনিতে পড়েছেন সংকটে।ফলে ব্যবসায়ীরাও গত কয়েকদিন বেকার জীবনযাপন করছেন।আয়-রোজগারে ঘাটতি দেখা দেয়ায় পরিবারের খরচ মেঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এক প্রকার ঘরবন্দী সময় পার করছেন।আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে।উখিয়ার মরিচ্যা বাজার,কোর্টবাজার,সোনারপাড়া বাজার,দারোগা বাজার,কুতুপালং বাজার,বালুখালী বাজার, থাইংখালী বাজার ও পালংখালী বাজারের দৈনন্দিনের নিত্য পণ্য ব্যবসায়ীদের অনেকেই আশানুরূপ ব্যবসা সফল না হওয়ায় হতাশায় ভোগছেন।সব মিলিয়ে উখিয়ার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিপর্যস্ততা বিরাজ করছে।
বুধবার (১৮ জুন) সকাল থেকে উখিয়ার বাজার ও জনলোকারণ্য এলাকা ঘুরে এসব তথ্য মিলে।
কুতুপালংয়ের শ্রমিক নেতা জসিম উদ্দিন জানান,গত কয়েকদিনের বৃষ্টিবাদলে সিএনজি ও টমটম চালকদের অনেকেই ঘর থেকে বের হয়নি।এতে তারাও আর্থিক সংকটে পড়েছেন।পরিবারের সংসার খরচ মেঠাতে ধারদেনা করতে দেখা যায়।
আবার অনেকেই ‘গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে, কিন্তু যাত্রী নেই।সিএনজি চালক মোহাম্মদ হোছন মাতু জানান,গাড়ী নিয়ে বের হয়েছি,রাস্তায় ভাড়া নেই।অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রী ভাড়া কম,তাই ভাড়াক কম।মালিকের আমদানি পরিশোধ করতে হিমসিম খাবো। ভাড়ায় গাড়ী চালিয়ে সংসারের ঘানি টানছি। প্রতিদিন সদাই করতে হয়। দিন যাচ্ছে অনেক কষ্টে।
দিনমজুর আবুল বশর ও ফজলুল হক জানান, গত ২/৩ দিন ধরে ঘরে বসা। কাজকর্মে যেতে পারি নাই। বৃষ্টি থামছে না। পরিবার পরিজন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি।অতি বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশংকা করছি।কুতুপালং বাজারের খাবার হোটেল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৃষ্টি হওয়ার কারণে গত ২/৩ দিন কাস্টমার কম পড়েছে,তাই বেচাও কম।কিন্তু কর্মচারী খরচ তো ঠিকই দিতে হচ্ছে।তৈরি করা খাবার বিক্রি না হওয়ায় তাও নষ্ট হচ্ছে।যে কয়দিন বৃষ্টি হয়েছে,ততদিন লোকশান গুণতে হচ্ছে।বৃষ্টি না হলে ভালো বিক্রি হয়।
কুতুপালং বাজারের তরকারি ব্যবসায়ী ইসমাঈল বলেন,গত ৩ দিন দোকান খুলি নাই। এত বৃষ্টিতে দোকানে পানি উঠেছে। মালামাল নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ভাড়ায় নেওয়া দোকান। না খুললেও ভাড়ার টাকা দিচ্ছি।

রাজাপালং ইউপি’র ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন,আমার ইউনিয়নের অনেক গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়েছে।নিজের উদ্যোগে সংস্কার কাজ চালাচ্ছি।সড়কের ভাঙ্গন রোধে দুই পাশে গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া নিচ্ছি।

পালংখালী ইউপি’র চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দিন জানিয়েছেন,গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাহাড়ধ্বের ঘটনা ঘটে প্রানহানী কিংবা বড় ক্ষতি না হলেও,সতর্কতা জারী করে পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন,প্রবল বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধ্বসের ঝুঁকি থাকায় প্রতিটি ইউনিয়নে আগাম সতর্কতা জারী করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করার নির্দেশ দেওয়া আছে।সে মতে সহযোগিতায় পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সুত্র জানিয়েছে আষাঢ়ের প্রথম দিন ১৪ জুন থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হতে পারে। আগামী ২২ জুন পর্যন্ত এ বৃষ্টি হতে পারে।আবহাওয়ার হিসেব অনুসারে জুন থেকে সেপ্টেম্বর,এ ৪ মাস বর্ষা মৌসুম হলেও বাংলা পঞ্জিকায় আষাঢ়-শ্রাবণকে বর্ষাকাল বলা হয়।সারাদেশের জুন মাসের গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৪৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ৫২৩ মিলিমিটার, অগাস্টে ৪২০ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং সেপ্টেম্বর মাসের গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৩১৮ দশমিক ২ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়।

Tag :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

তথ্য সংরক্ষণ করুন

জনপ্রিয়

উখিয়ায় সাংবাদিক মুসলিম উদ্দিনের বাড়ি ও দোকানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ; আহত ৫

উখিয়ায় টানা বৃষ্টি:গ্রামীন সড়ক বিধ্বস্ত:বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ: জনজীবন সংকটের কবলে!

আপডেট সময়: ০৩:০২:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

শ.ম.গফুর, উখিয়া:: উখিয়ায় টানা দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্লাবিত হয়েছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বিধ্বস্ত হয়েছে গ্রাম যোগাযোগ ব্যবস্থা।পানিতে তলিয়ে গেছে ক্ষেতখামার। অনেকে পরিবার পানিন্দি হয়ে পড়েছে।বিদ্যুতের ঘন-ঘন লোডশেডিংয়ে অন্ধকারে তীব্র কষ্টে কাতর মানুষ।

কর্মে যেতে না পেরে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে।দিনমজুর কামলারা বেশী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এছাড়াও রিকসাচালক, সিএনজি ও টমটম চালকরা পড়েছেন বিপাকে।দেখা দিয়েছে অর্থ সংকট।এ ছাড়াও কাচা ব্যবসায়ীরাও তরিতরকারি বিকিকিনিতে পড়েছেন সংকটে।ফলে ব্যবসায়ীরাও গত কয়েকদিন বেকার জীবনযাপন করছেন।আয়-রোজগারে ঘাটতি দেখা দেয়ায় পরিবারের খরচ মেঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এক প্রকার ঘরবন্দী সময় পার করছেন।আয়-রোজগারে ভাটা পড়েছে।উখিয়ার মরিচ্যা বাজার,কোর্টবাজার,সোনারপাড়া বাজার,দারোগা বাজার,কুতুপালং বাজার,বালুখালী বাজার, থাইংখালী বাজার ও পালংখালী বাজারের দৈনন্দিনের নিত্য পণ্য ব্যবসায়ীদের অনেকেই আশানুরূপ ব্যবসা সফল না হওয়ায় হতাশায় ভোগছেন।সব মিলিয়ে উখিয়ার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিপর্যস্ততা বিরাজ করছে।
বুধবার (১৮ জুন) সকাল থেকে উখিয়ার বাজার ও জনলোকারণ্য এলাকা ঘুরে এসব তথ্য মিলে।
কুতুপালংয়ের শ্রমিক নেতা জসিম উদ্দিন জানান,গত কয়েকদিনের বৃষ্টিবাদলে সিএনজি ও টমটম চালকদের অনেকেই ঘর থেকে বের হয়নি।এতে তারাও আর্থিক সংকটে পড়েছেন।পরিবারের সংসার খরচ মেঠাতে ধারদেনা করতে দেখা যায়।
আবার অনেকেই ‘গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে, কিন্তু যাত্রী নেই।সিএনজি চালক মোহাম্মদ হোছন মাতু জানান,গাড়ী নিয়ে বের হয়েছি,রাস্তায় ভাড়া নেই।অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রী ভাড়া কম,তাই ভাড়াক কম।মালিকের আমদানি পরিশোধ করতে হিমসিম খাবো। ভাড়ায় গাড়ী চালিয়ে সংসারের ঘানি টানছি। প্রতিদিন সদাই করতে হয়। দিন যাচ্ছে অনেক কষ্টে।
দিনমজুর আবুল বশর ও ফজলুল হক জানান, গত ২/৩ দিন ধরে ঘরে বসা। কাজকর্মে যেতে পারি নাই। বৃষ্টি থামছে না। পরিবার পরিজন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি।অতি বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশংকা করছি।কুতুপালং বাজারের খাবার হোটেল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৃষ্টি হওয়ার কারণে গত ২/৩ দিন কাস্টমার কম পড়েছে,তাই বেচাও কম।কিন্তু কর্মচারী খরচ তো ঠিকই দিতে হচ্ছে।তৈরি করা খাবার বিক্রি না হওয়ায় তাও নষ্ট হচ্ছে।যে কয়দিন বৃষ্টি হয়েছে,ততদিন লোকশান গুণতে হচ্ছে।বৃষ্টি না হলে ভালো বিক্রি হয়।
কুতুপালং বাজারের তরকারি ব্যবসায়ী ইসমাঈল বলেন,গত ৩ দিন দোকান খুলি নাই। এত বৃষ্টিতে দোকানে পানি উঠেছে। মালামাল নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ভাড়ায় নেওয়া দোকান। না খুললেও ভাড়ার টাকা দিচ্ছি।

রাজাপালং ইউপি’র ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন বলেন,আমার ইউনিয়নের অনেক গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়েছে।নিজের উদ্যোগে সংস্কার কাজ চালাচ্ছি।সড়কের ভাঙ্গন রোধে দুই পাশে গাছ লাগানোর প্রক্রিয়া নিচ্ছি।

পালংখালী ইউপি’র চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দিন জানিয়েছেন,গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পাহাড়ধ্বের ঘটনা ঘটে প্রানহানী কিংবা বড় ক্ষতি না হলেও,সতর্কতা জারী করে পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন,প্রবল বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধ্বসের ঝুঁকি থাকায় প্রতিটি ইউনিয়নে আগাম সতর্কতা জারী করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জনসাধারণের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করার নির্দেশ দেওয়া আছে।সে মতে সহযোগিতায় পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সুত্র জানিয়েছে আষাঢ়ের প্রথম দিন ১৪ জুন থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হতে পারে। আগামী ২২ জুন পর্যন্ত এ বৃষ্টি হতে পারে।আবহাওয়ার হিসেব অনুসারে জুন থেকে সেপ্টেম্বর,এ ৪ মাস বর্ষা মৌসুম হলেও বাংলা পঞ্জিকায় আষাঢ়-শ্রাবণকে বর্ষাকাল বলা হয়।সারাদেশের জুন মাসের গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৪৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ৫২৩ মিলিমিটার, অগাস্টে ৪২০ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং সেপ্টেম্বর মাসের গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৩১৮ দশমিক ২ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়।